উইন্ডোজ হোস্ট ফাইল বৃত্তান্ত – সবার অন্তরালে উইন্ডোজ হোস্ট ফাইল ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রন করুন অনাকাঙ্খিত ওয়েব সাইট ভিজিটিং সহ আপনার পিসির নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস।

টিউন করেছেনঃ | প্রকাশিত হয়েছেঃ 5:38 AM | টিউন বিভাগঃ
-------------------------- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ --------------------------
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন ।
এরকম অনেক ওয়েব সাইট আছে যেগুলো আপনি চান না যে আপনার পরিবারের সদস্য কিংবা আপনার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মচারী সেগুলো ভিজিট করুক। সেটা হতে পারে ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা অশ্লীল কোন সাইট। আপনার পরিবারের সদস্য কিংবা অন্য কাউকে কিছু সাইট ভিজিট করা থেকে বিরত রাখার জন্য আপনি এরকম চাইতেই পারেন। এই জন্য আপনি হয়তো কোন থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন অনাকাঙ্খিত ওয়েব সাইট ভিজিটিং ব্লক করার জন্য অথবা কিছুই করছেন না কারন আপনি এর প্রতিকার জানেন না। আপনি যদি সফটওয়্যার দিয়ে কিছু ব্লক করেন তাহলে আপনার চেয়ে এক্সপার্ট কেউ একজন হয়তো সেটা আনব্লক করে ফেলবে, কারন সব কিছুর কিছু অল্টারনেট সমাধান থাকে। আজ আমরা জানবো এ বিষয়ে উইন্ডোজের নিজস্ব কিছু সুবিধা সম্পর্কে যা আপনাকে অন্য কোন সফটওয়্যার ব্যবহারের চাইতে অনেক বেশি সুবিধা দিবে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো আমরা অধিকাংশই উইন্ডোজের নিজস্ব প্রোগ্রামগুলোর ব্যবহার জানিনা বলে প্রয়োজনে কোন ব্যবস্থা নিতে পারি না। আজ আমরা আলোচনা করবো উইন্ডোজ হোস্ট ফাইল সম্পর্কে যার সাহায্যে আপনি যে কোন ওয়েস সাইটের অ্যাক্সেস নিয়্ন্ত্রন করতে পারবেন। কয়েকদিন আগে আমি কোন এক টিউনে উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল সম্পর্কে বলেছিলাম, যার সাহায্যে আপনারা হয়তো অনেক সফটওয়্যারের ইন্টারনেট কানেকশন ব্লক করে রেখেছেন।
আমি নিজে যেহেতু উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করি এ কারনে আমি সেভেনের প্রসেসটাই দেখাবো কিন্তু অন্য অপারেটিং সিস্টেম যারা ব্যবহার করেন তারা একই পদ্ধতিতে কাজ করতে পারবেন। উইন্ডোজ হোস্ট ফাইলটি ব্যবহৃত হয়েছে শুধুমাত্র আইপি এড্রেসগুলোকে মানুষের পড়ার উপযোগী করার জন্য, যদিও এই কাজটি সাধারনত করে থাকে Domain Name Server (DNS)। কিন্তু হোস্ট ফাইল আপনাকে সেই সার্ভারকে বাইপাস করতে সহযোগিতা করবে যখন বলবে যে DNS isn't available। যাহোক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো হোস্ট ফাইলের সাহায্যে আপনার কম্পিউটার কোন সাইটে এক্সেস করতে পারবে আর কোন সাইটে পারবে না সেটা আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে কিছুদিন আগে প্রায় সপ্তাহ ধরে টেকটিউনস কেউ ভিজিট করতে পারেনি। কিন্তু উইন্ডোজ হোস্ট ফাইল এডিট করে কিন্তু আমরা টেকটিউনস ভিজিট করেছি (যদিও বিশেষ কোন লাভ হয়নি, কারন কেউ টিউন করেনি সে সময়)। আজকের টিউনে আমরা দেখবো কিভাবে হোস্ট ফাইলের সাহায্যে কাউকে কোন সাইট ভিজিট করা থেকে বিরত রাখতে পারি।

উইন্ডোজ হোস্ট ফাইল - সংক্ষিপ্ত আলোচনা

হোস্ট ফাইল নিয়ে যখন এতো কথা বললাম তখন অনেকের মনে নিশ্চয় হোস্ট ফাইল সম্পর্কে একটা বিশাল ধারনা সৃষ্টি হয়েছে? কেউ হয়তো ভাবছেন ইহা না জানি কতো জটিল জিনিস, ফাইল সাইজ হয়তো অনেক বেশি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি হোস্ট ফাইল খুব ছোট একটি ফাইল যার সাইজ সাধারনত ১ কিলোবাইটের বেশি না। কিন্তু আপনি যখন হোস্ট ফাইল এডিটিং শিখে যাবেন তখন হয়তো তার সাইজ ২ বা ৩ কিলোবাইট হতে পারে, যেমন আমারটা ২ কিলোবাইট। এখন প্রশ্ন হতে পারে কোথায় খুঁজে পাবেন এই মহামূল্যবান হোস্ট ফাইল? আপনারা যারা এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করেননি কোনদিন তারা হয়তো এরকম কিছু চোখেও দেখেননি। কারন এটা শীতকালের ব্যাঙ্গের মতোই গর্তে লুকিয়ে থাকে, টেনে বের না করলে এটা বের হয় না কোনদিন। তবে আপনি যদি এটাকে বের করতে চান তাহলে “C:\Windows\System32\drivers\etc” লোকেশনে গেলেই নিচের চিত্রের মতো করে হোস্ট ফাইল পেয়ে যাবেন।
প্রথম ফাইলটিই উইন্ডোজ হোস্ট ফাইল | আজকের আলোচনার বিষয় বস্তু!

হোস্ট ফাইলের কনটেন্ট ফরমেটঃ

  • হোস্ট ফাইলে আমরা যখন কোন কন্টেন্ট সংযোজন করবো তখন সেটা একটা নির্দিষ্ট ফরমেটে করতে হবে। হোস্ট ফাইলের কন্টেন্টগুলোর সাধারন ফরমেট হলো নিম্নরূপ, প্রথমে আইপি এড্রেস এবং তারপর থাকবে ডোমেইন নেইম।
    IP_ADDRESS domain name
    এটাই মুলত আইপি টু ডোমেইনের জন্য বেসিক ম্যাপিং। উদাহরণ হিসাবে নিচের লাইনটি দেখুন।
    192.168.100.21 bodhi-linux
    আপনি যদি হোস্ট ফাইলে নিচের লাইনটি যোগ করে দেন তাহলে 192.168.100.21 আইপি এড্রেসে bodhi-linux ডোমেইন নেম দিয়ে এক্সেস করবে।

হোস্ট ফাইল এডিটিং

উইন্ডোজ হোস্ট ফাইলকে এডিট করার জন্য সহজ কিছু ধাপ আপনাকে অতিক্রম করতে হবে। এটা খুব বেসিক কম্পিউটারের জ্ঞান যাদের আছে তারা খুব সহজেই করতে পারবে। যাদের নেই তারা যে করতে পারবে না এরকম কিছু না, আমার টিউন সকল শ্রেণীর কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্য সহজ হবে এটাই থাকে আমার প্রত্যাশা। যাহোক চলুন দেখে নেই কিভাবে হোস্ট ফাইল এডিট করতে হয়।
  • প্রথমে C:\Windows\System32\drivers\etc লোকেশনে গিয়ে হোস্ট ফাইলটি সনাক্ত করুন। প্রথম চিত্রটি যদি দেখে থাকেন তাহলেই হয়তো চিনতে পারবেন। এবার হোস্ট ফাইলের উপর মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে Properties অপশন থেকে নিচের চিত্রের মতো করে Read Only অপশনটি আনচেক করে দিন। তারপর OK / Apply চেপে বেরিয়ে আসুন।

  • এবার আপনার কম্পিউটারের Start মেনু থেকে All Programs >> Accessories >> Notepad বের করুন। তারপর নিচের চিত্রে মতো Notepad কে এডমিন হিসাবে রান করুন।

  • এখন C:\Windows\System32\drivers\etc লোকেশনে থাকা হোস্ট ফাইলটিকে নোটপ্যাড দিয়ে ব্রাউজ করে ওপেন করুন। উক্ত লোকেশনে হোস্ট ফাইলটিকে যদি খুঁজে না পান তাহলে লক্ষ্য করবেন নোটপ্যাড ফাইল টাইপ All Files দেওয়া আছে কিনা। কারন টেক্সট ফরমেটে থাকলে খুঁজে পাবেন না। হোস্ট ফাইলটিকে ওপেন করলে নিচের চিত্রের মতো দেখতে পাবেন। এখানে চিহিৃত অংশটুকুর উপরের অংশ স্বাভাবিক ভাবে দেওয়া থাকে। বিভিন্ন সাইট ব্লক করার জন্য আমি পরের অংশটুকু যোগ করেছি।

হোস্ট ফাইল যে কাজগুলো যেভাবে করে থাকে

আমি আগেই বলেছি যে হোস্ট ফাইল আপনার পিসির ইন্টারনেট এক্সেস নিয়ন্ত্রন করে। তাই হোস্ট ফাইলের কাজের মধ্যে আমি কোন সাইটকে কিভাবে ব্লক করতে হয় সেটাই দেখাবো। এর পেছনে কারন হলো আমি আগামীতে যে টিউনগুলো করবো সেগুলোতে এই হোস্ট ফাইল এডিটিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই আজকের এই টিউন করা।

হোস্ট ফাইল দিয়ে অপ্রয়োজনীয় সাইট ব্লক করাঃ

  • আপনি যদি কোন সাইটকে ব্লক করতে চান তাহলে উইন্ডোজ হোস্ট ফাইলের মধ্যে হোস্ট ফাইলের নিজস্ব ফরমেট অনুযায়ী আইপি এড্রেস এবং ডোমেইন নেইম সংযোজন করতে হবে। সাধারন নিচের ফরমেট অনুযায়ী হোস্ট ফাইলকে এডিট করতে হবে।
    127.0.0.1 unwanted.domain
    এখানে লক্ষ্য করুন প্রথমেই যে আইপি এড্রেস(127.0.0.1 ) আছে সেটা মুলত লোপ-ব্যাক অ্যাড্রেস হিসাবে কাজ করে, তার মানে হলো আপনি যদি unwanted.domain সাইটে প্রবেশ করে তাহলে সেটি আপনাকে আবার লোকাল মেশিনে ফিরিয়ে আনবে। এবং আপনি দেখতে পাবেন পেজ নট ফাউন্ড নোটিফিকেশন আসবে ব্রাউজারে। 127.0.0.1 এই লোপ-ব্যাক এড্রেস টি শুধুমাত্র উইন্ডোজের জন্যই না, এটা আপনি ম্যাক কিংবা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমেও ব্যবহার করতে পারবেন।
  • দ্বিতীয় আরও একটা পদ্ধতি আছে যেটা আমার কাছে খুব মজার বলে মনে হয় সেটা হলো, ধরুন আপনি চাচ্ছেন যে আপনার পিসিতে কোন নির্দিষ্টি সাইটে কেউ এক্সেস করতে চাইলে সেটা তাকে অন্য সাইটে নিয়ে যাবে। বুঝতে পারছেন না হয়তো অনেকেই, সমস্যা নেই আমি আরও একটি বিস্তারিত বলছি- আপনি চাচ্ছেন আপনার কম্পিউটার দিয়ে যখন কেউ ফেসবুকে ঢুকতে চাইবে তখন সেটা ফেসবুকে না গিয়ে অন্য সাইটে ঢুকবে। এর জন্য আপনি যে সাইটে রি-ডাইরেক্ট করতে চাচ্ছেন সেই সাইটের আইপি লিখে তারপর আপনার আনওয়ান্টেড ডোমেইন লিখুন নিচের লাইনের মতো।
    192.168.100.21 unwanted.domain
    এখানে 192.168.100.21 হলো নতুন সাইটের (আপনার পছন্দের সাইট অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে) আইপি এড্রেস এবং পরের অংশটুকু হলো যে সাইট আপনি ব্লক করতে চান তার ডোমেইন।
টিউনটির একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসছি কিন্তু জানিনা আপনারা টিউনটি কতোটুকু বুঝতে পেরেছেন। আপনাদের টিউনটি শতভাগ বুঝানোর জন্য আমি শতাধিকবার চেষ্টা করতে পারি। আজকের টিউনের মুল উদ্দেশ্য হলো অনাকাঙ্খিত সাইটগুলোকে ব্লক করে রাখা। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই পদ্ধতিটা ব্যবহার করি শুধু মাত্র বিভিন্ন সফটওয়্যার যাতে তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইটে ঢুকতে না পারে এর জন্য। তবে আপনারা যার যেরকম প্রয়োজন সে অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

শেষ কথা

টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর আপনাদের যাদের টেকটিউনসে একাউন্ট নেই তারা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ লিংক থেকে আমার টিউনে কমেন্ট করতে পারবেন। পেজে লাইক দিয়ে আমার সকল টিউন বিষয়ে আপডেট থাকুন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।

Previous
Next Post »
Designed by MS Design

Powered by Blogger